ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাকাল মধ্যবিত্ত

অনলাইন ডেস্ক :: আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের বুকিং দর বৃদ্ধি, দেশের বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং সর্বশেষ সংযোজন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। এই তিনটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোগ্যপণ্যের বাজারের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ভাড়া বাড়ার কারণে মধ্যবিত্তের চাপ আরো বেড়ে গেলো। বর্তমান ভোগ্যপণ্যের উর্ধ্বগতি, ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা এবং ব্যক্তিগত খরচের সাথে আয়ের বিশাল ব্যবধান রয়ে গেছে। ফলে ব্যয় সংকোচনের জন্য শহর থেকে অনেকে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যপণ্যের মধ্যে অনেক পণ্য রয়েছে যেগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর সব সময় এক রকম থাকে না। কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি একদম উড়িয়ে যায় না। কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সেইসব দেখার দায়িত্ব সরকারের। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করে। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার শুধুমাত্র রমজান এলেই বাজার মনিটরিং করে। মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছে মতো বাড়ায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

ভোক্তারা বলছেন, গত বছর এমন দিনে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০৫ টাকা। বর্তমানে প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ৫৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এছাড়া গত বছর প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়। এখন সেই চিনির দাম ২৮ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়, সেই মসুর ডাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। অন্যদিকে সব ধরণের চাল গত বছরের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত।

বেসরকারি চাকরীজীবী আমানুল্লাহ জোনায়েদ বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে একটা টাকাও বেতন বাড়েনি। উল্টো করোনার পরিস্থিতির অবনতির সময়ে অফিস থেকে অর্ধেক বেতন দিয়েছে। কিন্তু খরচ কিন্তু দিন দিন বেড়ে চলেছে। এখন সরকার ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। সামনে মাসের জানুয়ারিতে বাসা ভাড়া বাড়াবে বাড়ির মালিক।

আবার বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকলেও মাসে মাসে বেতন কিন্তু দিতে হয়েছে। জিল্লুর রহমান নামে এক বেসরকারি স্কুল শিক্ষক বলেন, করোনার পরিস্থিতির কারণে আর্থিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে দীর্ঘদিন ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। আসলে মধ্যবিত্তের কান্না তো কেউ শুনে না। জীবন যাপনে যেভাবে ব্যয় বাড়ছে, সেই হিসেবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার তো আর আমাদের কথা ভাবছে না। সরকার নিজ নিজ দপ্তরের লোকসান কমাতে একের পর এক ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। সেই বোঝায় আমরা পিষ্ট হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন  বলেন, নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বিপদে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালানোটা অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে। করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে গেছেন। গ্রামে গিয়ে করুন অবস্থায় দিনযাপন করছেন এমনও অনেকে আছেন। এরমধ্যেই কিন্তু তেল-ডাল ও চিনির বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া থেমে থেমে চালের বাজারও বেড়েছে। সরকার চালের আমদানির শুল্ক কমিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও এখনো চড়া চালের বাজার। এছাড়া এখন বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। সব মিলয়ে বলা যায়, মধ্যবিত্তের কপালে কষ্ট ছাড়া আপাতত আর কিছুই যেন নেই।

পাঠকের মতামত: